আরব জাতীকে আহ্বানকারী সাহসী সন্তান, ফিলিস্তিনের প্রখ্যাত আলেম, মসজিদে আকসার প্রবীণ ও সংগ্রামী সেবক শায়খ বদর আল রাজাবি আর-রাফায়ি (৯৭) বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
দখলদার ইসরায়েলি সেনাদের বুলেটের সামনে মসজিদে আকসার গেটে দাঁড়িয়ে তিনি আরব জাতিকে বায়তুল মুকাদ্দাস রক্ষায় এভাবে আহ্বান করতেন-
‘হে আরব জাতি! আপনার কোথায়? বায়তুল মুকাদ্দাস উদ্ধার করুন। এই যে দেখুন, আমি লাঠি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আপনাদের সহযোগিতায়।’
মসজিদে আকসার সেবক ও অতন্দ্র প্রহরী, আরব জাতিকে আহ্বানকারী শায়খ বদর আল-রাজাবি শত অভিমান বুকে নিয়ে নিরবে নিভৃতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন পরপারে। মসজিদে আকসার গেটে ইসরায়েলি সেনাদের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে আর কেউ ঘোষণা করবে না- ‘হে আরব জাতি! তোমরা কোথায়? মসজিদে আকসা রক্ষায় তোমরা এগিয়ে আসো।’
কে এই বদর আল রাজাবি?
১৯২৫ সালে তিনি ফিলিস্তিনে জন্ম গ্রহণ করেন। মুক্ত স্বাধীন জেরুজালেমে তিনি বেড়ে ওঠেছেন। বংশ পরম্পরায় তিনি মসজিদে আকসার খাদেম হিসেবে আভির্ভূত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও তিনি ফিলিস্তিনের বর্তমান ইসরায়েল দখলকৃত জেরুজালেমে অবস্থান করেন।
মসজিদে আকসার সেবাদানকারীদের সন্তান হিসেবেই তাকে বিবেচনা করা হয়। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি মসজিদে আকসার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। ইসরায়েলি সেনাদের বুলেটের উপস্থিতিও তাকে মসজিদে আকসা থেকে সরাতে পারেনি।
১৯৬৭ সালে যখন দখলদার ইসরায়েল ফিলিস্তিনের পবিত্রভূমি জেরুজালেম ও মসজিদে আকসা দখল করে নেয়। মসজিদটির ওল্ডসিটির সব প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দেয়। তখনও বদর আল রাজাবি ছিলেন সাহসী সেবক।
সে সময় ইসরায়েল মসজিদে আকসায় জুমআর নামাজ বন্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে নামাজ আদায়কারীদের আটকাতে থাকে। সে সময়টিতেও বদর আল রাজাবি সব প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলেন। কখনো পিছু হটেননি।
২০১৭ সালের ১৪ জুলাই বৈদ্যুতিক গেট প্রতিস্থাপনের বিষয়েও তিনি প্রতিবাদের মুখে লড়াই শুরু করেছিলেন।
মসজিদে আকসায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে নামাজ আদায়ের অধ্যাবসায় তিনি জীবন অতিবাহিত করেছেন। বুলেটের মুখে জীবনবাজি রেখে মসজিদে আকসার ইবাদতের ধারাকে অব্যাহত রেখেছেন।
আলহামদুলিল্লাহ! তিনি কোনো রোগে না ভুগেই স্বাভাবিকভাবেই ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী শোকের ছায়া নেমে আসে। শায়েখ নায়েল আল-গাজি আলি এক টুইট বার্তায় শোক জানিয়ে লেখেন-
‘আল্লাহ তাআলা শায়খ বদর আল-রাজাবির প্রতি রহম করুন। মসজিদে আকসার সামনে দাঁড়িয়ে আরব জাতিকে আহ্বানের সে কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হয়- ‘হে আরব জাতি! আপনারা কোথায়?’
শায়খ বদর আল-রাজাবি আজীবন সংগ্রামের মাধ্যমে তার দায়িত্ব পালন করে তার রবের দরবারে পৌছে গেছেন। তাঁর কণ্ঠ থেকে আর মসজিদে আকসা রক্ষার আহ্বান প্রতিধ্বনিত হবে না।
মসজিদে আকসার সেবক, ফিলিস্তিনের প্রখ্যাত এ আলেমে দ্বীনকে আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। শাহাদাতের তামান্নায় লাঠি হাতে নিয়ে দখলদার ইসরায়েলি সেনাদের সামনে অবস্থানকারী গাজি বদর আল-রাজাবি আর-রাফায়িকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। আমিন।